বাংলার প্রতিটি নারী জাহান্নামী, কারন স্বামী।
চার পাঁচ বছর আগের এক প্রশিক্ষণার্থী সনদ পত্র নেওয়ার জন্য অফিসে আসলো। একে অপরের কুশলাদি বিনিময় করলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম- “আপনি বিয়ে করছেন?” হ্যাঁ আমার বিয়ে হয়েছে, উত্তরে সে বললো। বাংলাদেশের যেকোন মেয়েকে বিয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে, উত্তরটা এরকমই হয়। হয়তো সে বলবে “না, এখনো বিয়ে হয়নি। অথবা হ্যা, বিয়ে হইছে। হোক শিক্ষিত হোক অশিক্ষিত।
পাশের বাসার বউয়ের সাথে, আমার বউয়ের খুব ভালো সম্পর্ক। দুই বউ একে অপরকে ভাবী বলে সম্বোধন করে। বউয়েরা একে অপরের স্বামীকে ভালো করে চিনে না। দুই বউয়ের স্বামীরা একে অপরকে চিনে না। এক বউ অন্য বউয়ের স্বামীর সাথে কখনো কথাও বলেনি। এক বউয়ের স্বামী অন্য বউয়ের ভাই তো অবশ্যই না, সামান্য পরিচয়ও নাই। কিন্তু তারা একে অপরকে ভাবী সম্বোধন করছে। যে নারী দেখতে বিবাহিত বিবাহিত, তাকে যেকেউ ভাবী বলে সম্বোধন করে। যদিও ঐ নারীর সাথে পরিচয় নাই। যদিও নারীর স্বামীর সাথে পরিচয় নাই। ভাই না থাকলে ভাবী আসে কোথায় থেকে। ভাইয়ের সূত্রে ভাবী আসে, এটাই নিয়ম। যেমনভাবে বোনের সূত্রে দুলাভাই। পুরুষের সঙ্গে পরিচয় থাকে এবং সেই সূত্রে ঐ পুরুষের বউকে ভাবী সম্বোধন করতেই পারি। প্রথম পরিচয়ে অথবা অপরিচিত নারীকে ভাবী সম্বোধন করছি। তার সাথে একজন পুরুষকে ট্যাগ করে দিচ্ছি। নারীর সাথে পরিচয় হলে, নারীকে বোন সম্বোধন করা উচিত। সেই সূত্রে নারীর স্বামী দুলাভাই। নারীর স্বামীকে দুলাভাই তো দূরের কথা, নারীকে ভাবী সম্বোধন করছি। এবং এক নারীকে আর এক নারীকে। নারীর স্বাধীন স্বত্তাকে পুরুষের সাথে ট্যাগ করে দিচ্ছি। নারীর স্বামীকে দুলাভাই বলবোনা, এটা সত্য। ঠিক তেমনী নারীকে ভাবী বলা থেকে বিরত থাকা উচিত। যেভাবে পুরুষকে স্বাধীন শব্দ ‘ভাই’ সম্বোধন করছি। নারীকে স্বাধীন ভাবে সম্বোধন করার সুন্দর শব্দ আছে। প্রথম পরিচয়ে বোন বলতে পারি, আপা বলতে পারি, ম্যাডাম বলতে পারি। চাচীও কিন্তু স্বাধীন শব্দ নয়। ফুপু সম্বোধন করতে পারি।
নারী তার বর কে স্বামী সম্বোধন করে।‘ সংসদ’ বাংলা অভিধানে স্বামীর অর্থ পতি, প্রভু, মনিব, মালিক ইত্যাদি। ইন্টারনেট গুগলে সার্চ করলাম, ঐখানেও অর্থ গুলো একই। কবি ‘গোলাম মোস্তফার’ ‘প্রার্থনা’ নামক কবিতায় প্রথম কয়েকটি লাইন হচ্ছে-
অনন্ত অসীম প্রেমময়
তুমি
বিচার দিনের স্বামী।
যত গুনগান হে
চির
মহান
তোমারী অন্তর্যামী।
সুতরাং এটা স্পষ্ট, স্বামী মানে প্রভু। একসময় স্বামীদের প্রভু মনে করা হতো। স্বামীরাই নারীদের খাওয়ায়, পড়াই। স্বামীরাই নারীদের মালিক। যারা ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাস পড়েছেন, তারা জানেন মকবুল বুড়া কিভাবে তার বউদের মালিক ছিল। উপন্যাসে- নিজের ইচ্ছায় কোন নারীর বিয়ে করাটাও অপরাধ ছিল। সময় এখন অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। কোন নারী তার স্বামীকে প্রভু মনে করে না। করা উচিতও না। কিন্তু স্বামী শব্দটা ব্যবহার খুব ভালো ভাবেই হচ্ছে। স্বামীর জায়গায় আমরা বলতে পারি বর, বলতে পারি Husband, বলতে পারি খাটি বাংলা শব্দ ভাতার। (Husband : a married man considered in relation to his
spouse.)
এখনো একটা ছেলে বলে- আমি বিয়ে করলাম বা আমি বিয়ে করিনি বা
আমি বিয়ে করবো। আগেও একটা ছেলে বলতো- আমি বিয়ে করলাম বা আমি বিয়ে করিনি বা
আমি বিয়ে করবো। কিন্তু এখনো কোন মেয়ে মনসিক ভাবে “আমি বিয়ে করলাম” কথাটি বলার জন্য প্রস্তুত নয়। সব মেয়ে মনে করে আমার বিয়ে হয়ছে অথবা বিয়ে হবে। আমি করলাম আর আমার হয়ে গেল। আমি করবো আর আমার হবে। দুটো তফাৎ অনেক অনেক অনেক বেশী। বেগম রোকেয়া একশো বছরের অধিক সময় আগে বলে গেছেন ‘জাগো গো ভগিনি’। এখনো বহাল আছে ‘জাগো গো ভগিনি’।
বাংলার নারী স্বামী ছাড়া অধরা। তোমার স্বামী আছে, দিনে একশো বার স্বামী স্বামী করো। অতএব . . . .. . জ্বালা বাড়লো।
No comments:
Post a Comment