কোন কিছু খুঁজতে চাইলে, বক্সে লিখুন
সত্য জগতের বাসিন্দা
(যেখানে কেউ মিথ্যা বলেন না।)
এমন একটা জগতের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিবো,
যেখানে কেউ মিথ্যা বলেন না। কিন্তু তার আগে-
আমার বাবার দাদারা তিন ভাই। আমরা জানটু মহম্মদ
এর পক্ষ। অন্য আর এক পক্ষ দাবী করছেন, তারা আমাদের কাছে জমি পাবেন। এজন্য তারা ইউনিয়ন
পরিষদে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ পত্রে তারা উল্লেখ করেন, আমরা অত্যান্ত দূর্দান্ত,
ভূমি দস্যু, জবর দখলকারী আরও ইত্যাদি। অথচ জমি নিয়ে তাদের সাথে মারামারি, কথা কাটাকাটি
বা ঝগড়া কিছুই হয়নি। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। ঐ পক্ষের লিডারের সাথে আমার
সম্পর্ক আরও বেশী ভালো। আমি নিশ্চিত- অভিযোগে পত্রে লিখেলেও, সে নিজে এটা বিশ্বাস করে
না। আমি তার সাথে (লিডারের সাথে) কথা বললাম। তার ভাষ্য, এসব কথা না লিখলে অভিযোগটা
শক্ত হবে না। অভিযোগ লিখার সাহায্যকারী তাকে এসব কথা লিখে দিয়েছেন। আমরা জবর দখলকারী,
ভূমি দস্যু এটা সে মনে করেন না। সে নিজে মনে না করলেও, লিখেছেন। মিথ্যা হলেও এটাকে
সে মিথ্যা বলছেন না। এবং অনেকেই বিশ্বাস করেন- লেখার সময় এমন করে লিখতে হয়। তা না হলে
অভিযোগটা শক্ত হবে না। অনেক শিক্ষিত লোকও এই ধারনায় বিশ্বাস করেন।
গত কয়েকদিন আগে ‘মাসুদ সেজান’ পরিচালিত ‘পাগল’
নামে একটা নাটক দেখলাম। নাটকে নায়কের বস অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে। বসের বউ সে
বিষয়ে নায়ককে জিজ্ঞেস করলেন। নায়ক সত্যি বলার কারণে তার চাকরি নাই হয়ে গেল। সত্য বলার কারণে নায়কের দুই নাম্বার এক বন্ধুর বিয়ে ভেঙে গেল। সত্য কথার প্রভাব তার সংসারে মানে বউয়ের উপর
পড়ে। সত্য কথার জন্য তার অফিসের কলিগ,
আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী অনেকের সমস্যা হতে থাকে। আমাদের সমাজে এমন কিছু
ঘটনা ঘটে, যেখানে সাধারণত কেউ সত্য কথা বলেন না। নায়ক
ঐসব ক্ষেত্রে সত্য কথা বলে সমস্যা
বেঁধে দেয়। সবাই ওকে পাগল বলে। মিথ্যাই সত্য, সত্যটাই কেন বলবে তুমি?
কি দরকার সত্য বলার, এরকম আরকি।
এখন ভার্চুয়ালের
যুগ, সোস্যাল মিডিয়ার যুগ। আমার অথবা আপনার বন্ধু ফেসবুকে
ফ্যামিলি সহ একটা ছবি শেয়ার করেছেন। ছবিটা
মোটেও ভালো লাগেনি। অথবা ভালো করে দেখিনি। কিন্তু
কমেন্ট বক্সে নাইস, বিউটিফুল, হ্যাপি ফ্যামিলি ইত্যাদি খুব
সুন্দর করে কমেন্ট লিখে দিলাম।
যদিও সে বা তারা সুখী কিনা, আমি জানিনা। এমনও হতে পারে, তাদের কে আমি ফেসবুকের বাইরে চিনিও
না।
ট্রাকের গায়ে পিছনে
লেখা থাকে ‘সাবধানতা অবলম্বন করুন, একশো গজ দূরে থাকুন’। একশো গজ দূরে থাকলে রাস্তা পাবো কই। হাঁটতে হবে জঙ্গল দিয়ে, যা কোন ভাবেই সম্ভব না। এই বাক্যটি যে
লিখেছেন সে জানে, এটা ভুল। যে লিখাইছেন সেও জানে, এটা ভুল।
যার গাড়ী, সেও জানে এটা ভুল। আমি বা আপনি যে পড়ছেন, সেও জানে এটা ভুল। অথচ
এই ভুল শব্দটি কোন প্রকার আপত্তি ছাড়াই মেনে নিচ্ছি। এটা ভুল অথবা মিথ্যা কখনো
মনেও হচ্ছে না।
গত কয়েক মাস আগে, করোনার
সময় সিলেটে (সম্ভবত) সন্ধার পর কয়েকজন বখাটে বরকে জিম্মি করে নববধূকে তুলে নিয়ে
ধর্ষণ করে। এঘটনা
সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
ঐ সময় নিরাপত্তার জন্য পঞ্চগড় এম.আর. কলেজ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে একটি পোস্টার টাঙানো হয়। বিকাল পাঁচটার পর অর্থাৎ
অফিস টাইমের পর ক্যাম্পাসে কেউ প্রবেশ করতে
পারবেন না। কিন্তু কলেজের পিছনে
পশ্চিম পাশে আস্ত একটা বস্তি আছে, বস্তিবাসী প্রায় সবাই কলেজের ভিতর দিয়ে যাতায়াত করে এবং রিক্সা যোগে। সকালে অনেকেই হাঁটতে এবং ব্যায়াম
করতে কলেজ ক্যাম্পাসে যায়। বিকালে প্রতিদিন মাঠে খেলাও হয়। এসব ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ
ভালো করেই জানেন। তাদের নির্দেশ কিংবা আদেশ কেউ মানবেন না, এটাও তারা ভালো করেই জানেন। কিন্তু তারা একটা দায়সারা
এবং মিথ্যা অথবা ভুল নির্দেশ ঝুলাই দিলেন, দেওয়ালে দেওয়ালে। আমরা এটাকে মিথ্যা হিসেবে মনে করলাম
না।
রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তার বক্তব্য কিংবা নির্বাচনী ইশতিহার অনেকটাই মিথ্যা। এটা বক্তাও জানেন, শ্রোতাও জানেন। কিন্তু তারপরেও অনেকেই
সত্য মনে করে মনের অজান্তেই মিথ্যা বলছেন, কেউ সত্য মনে করে মনের অজান্তেই মিথ্যা শুনছেন। মনের অজান্তেই মিথ্যাকে সত্য মনে হচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে শেখ রাসেল দিবস পালন হয়ে গেল। অনেকেই বক্তব্য রাখছেন। কেউ বলছেন শেখ রাসেল খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন। কেউ বলছেন শেখ রাসেল দার্শনিক চিন্তা চেতনার মানুষ ছিলেন। কেউ বলছেন শেখ রাসেল খুব দূরদর্শী চিন্তা ভাবনার মানুষ ছিলেন। যদিও মৃত্যূকালে শেখ রাসেলের বয়স
মাত্র দশ বছর। মিডিয়ার মাধ্যমে
একজন নেতার শেখ রাসেল দিবসের কান্নাজড়িত বক্তব্য দেখলাম এবং শুনলাম। নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা তার নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন। উনিও জানেন, এসব বক্তব্য মিথ্যা। হয়তো মনের অজান্তেই সত্য হিসেবে মেনে নিচ্ছেন। হয়তো মনের অজান্তেই মিথ্যাকে
সত্য মনে করে বলেছিলেন- “এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন”। হয়তো মনের অজান্তেই
মিথ্যাকে সত্য মনে করে বলেছিলেন “দেশে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে”। আবার হয়তো বলবেন- সামনের নির্বাচন হবে সবচেয়ে অবাধ এবং সুষ্ঠ নির্বাচন, যা সারা বিশ্বে মডেল হয়ে
থাকবে।
আসছে সামনের ভার্চুয়াল পৃথিবী- যেখানে কোন মিথ্যা থাকবে
না। যা থাকবে সবই সত্য। মিথ্যাটাও সত্য, সত্যটাও সত্য। আমরা হবো সত্য জগতের বাসিন্দা।
কেমন লাগল পরামর্শ আশা করছি।
বই পড়ুন
একশো বছর আগে প্রকাশিত যে বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় তা ঐ সময়ের সবচেয়ে ভালো বই। বইয়ের লেখক ঐ সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। লেখক তার সর্বোচ্চ মেধা এবং সবচেয়ে ভালো কথা গুলো লেখেন। সুতরাং বই পড়ছেন তো সবচেয়ে জ্ঞানী লোকের সবচেয়ে ভালো কথা গুলো পড়ছেন।
No comments:
Post a Comment