কোন কিছু খুঁজতে চাইলে, বক্সে লিখুন

Thursday 16 April 2020

আজব নাকি গুজবী খবর

(ময়দার মিল থেকে চাল উৎপাদন, চাল চুরি রোধের ক্ষুদ্র প্রয়াস)
বাংলাদেশে একটি ময়দার মিলের সন্ধান পাওয়া গেছে। মিলটার বিশেষত হচ্ছে এ মিল থেকে চাল উৎপাদন হবে। সবাই মিলে চাল উৎপাদনের জোড় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। চাল উৎপাদনের কাছাকছি যাচ্ছে, আবার কোন এক অজানা কারনে সিস্টেম লস করছে। ঠিক যেন বাংলাদেশের রাজনীতির আশার মতো। এবার রাজনীতির অমূল পরিবর্তন হবে। পরিবর্তনের কাছাকাছি গিয়ে সিস্টেম লস হয়ে যাচ্ছে। ময়দার মিলের সিস্টেম এবং আমাদের রাজনীতির সিস্টেমের মধ্যে কোথায় যেন একটা গলদ আছে। ফলাফলের কাছাকাছি গিয়েও ফল হচ্ছে না কেন? রাজনৈতিক সিস্টেম একটু বিশ্লেষণ করি, ময়দা মিল থেকে চাল উৎপাদন পরে দেখবোই ইনশাল্লাহ।
আপনার আশে পাশে যারা রাজনীতি করছে তাদের লক্ষ্য করুন। দেখবেন ঐ লোকটি নিরুপায় হয়েই রাজনীতি করছে। তার অন্য কোন পথ নাই। সে হয়তো কিস্তিতে মেট্রিক্স পাস। প্রথম কিস্তি চার সাবজেক্ট, দ্বিতীয় কিস্তি চার সাবজেক্ট, ফাইনাল কিস্তি বাকীগুলো। উচ্চ মাধ্যমিক ওরে বাপ-সে বুঝে গেছে। ওঠা আমার জন্য না। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে ব্যবসা ইট ইজ সো কঠিন। সো-কি করা যায়। শুরু হলো উপজেলা বা জেলা সভাপতির পা-চাটা। জেলা সভাপতির খুব সম্মান। তার বাবা পাকিস্থান আমলের চেয়ারম্যান অথবা বঙ্গবন্ধুর আমলের রাজনীতিবিদ। জনশ্রুতি আছে তার বাবা খুব ভালো লোক। আসলে কি তাই? ঐ সময়ে বাংলার সাধারন জনগন খুব সহজ সরল। লিডাররা সহজে সাধারন মানুষকে মানসিক ভাবে ঘায়েল করতো। ইমশোনাল ব্লাকমেইল, যা আজোও হচ্ছে তবে পরিমান কম। সাধারন জনগন লিডার বা নেতাকে মুনিব মানতো। আমার জন্মস্থান রামপুরে ‍দুটো গ্রুপ ছিল। এক গ্রুপের লিডার বা মতব্বর মিস্ত্রী সাহেব (তিনার আসল নাম জানি না) আমি এই গ্রুপের বংশধর। বিয়ে, খাৎনা, আকিকা বা যেকোন অনুষ্ঠানের জন্য মিস্ত্রী সাহেব কে জানাতে হবে। মিস্ত্রী সম্মতি না দিলে, অয়োজন সম্ভব না। মিস্ত্রী না বলছে। এতএব ঠিক। ঐ সময়ের নেতারা সাধারন মানুষের দেবতা। সত্যিকার নেতা ছিল কিনা আমার সন্দেহ (সম্ভব হলে এ বিষয়ে আলাদা করে লিখবো)। জেলা বা উপজেলা সভাপতি তাদের সন্তান। তাদের সামনে, পিছনে, উপরে, নিচে দলে দলে পা-চাটার দল। জী-হুজুরের দল। উপর থেকে নিচ, নিচ থেকে উপর (টপ টু বটম) যার যেখানে দরকার জী-হুজুর জী-হুজুর করছে। টপ টু বটম সবাই জী-হুজুরের দলকে পুষে। জী-হুজুরের দলকে তাদের পেশা জিজ্ঞাসা করলে তারা উত্তর দিবে “ আমার পেশা জী-হুজুর” যত বেশী জী-হুজুর তত বেশী বেতন ভাতা। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ক্লাব ইত্যাদি নামে তত বেশী প্রকল্প। তত বেশী বরাদ্দ। 
আপনি হয়তো ভাবছেন জী-হুজুরেরা সব শ্যালা। না! কেউ সত্যিকার জী-হুজুর কেউ মাইনক্যা চিপায়। সত্যিহোক আর মাইনক্যা চিপায় হোক, জী-হুজুর ছাড়া তাদের অন্য কোন পথ নাই। আমার অফিসের চেয়ারম্যান রাজনৈতিক ব্যাক্তি। পোস্টটাকে বলা হয় অনারেবল (Honorable) মানে সম্মানী পোস্ট। প্রত্যেকটা জেলা অফিসে গড়ে ৪-৬ টা করে প্রকল্প (৪-৬ টা কার্যক্রম) পরিচালিত হয়। গড়ে প্রতি মাসে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে ৪-৫ লাখ টাকা পাস হয়। কিন্তু তার ভাতা খুবই অল্প (উল্লেখ করলাম না)। চেয়ারম্যানের অধীনস্ত নির্বাহী কর্মকর্তার বেতন ভাতা তার চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশী। সম্মানী লোকটার কাছে এক কাপ চায়ের আবদার করলে সম্মানের বারোটা বাজে যাবে, আমি নিশ্চিত। সম্মান রক্ষার জন্য তারাও চুরি করে। চুরি করার যোগ্যতার জন্য তারাও জী-হুজুর, জী-হুজুর করে। 

আমি বা আমরা যতই গালি দেয়, আমরা কিন্তু বিভিন্ন প্রয়োজনে জী-হুজুরদের কাছেই যায়। বিভিন্ন উপলক্ষে অনুদানের জন্য তাদের কাছেই যায়। কারন তিনি সমাজ সেবক। জী-হুজুরের দল সমাজের কতটা সেবা করতে পারছে বা করছে। সমাজের সেবা করার আগে নিজেরও সেবা করা খুব জরুরী। জী-হুজুরের দল নিজেরও কতটা সেবা করতে পারছে বা করছে। জী-হুজুরের দলেরও ঔষধ খাওয়া বাবা অথবা মা আছে। শপিং নেশাগ্রস্থ বউ তাদেরও আছে। তাদেরও আছে পরিবার। কিন্তু জী-হুজুরদের নিজের সেবা (সমাজের সেবা বাদ দিলাম) করার যৌক্তিক কোন উপায় আছে কি? সরকারী, বিরোধী বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের উপজেলা বা জেলা সভাপতির যৌক্তিক কোন উপার্জন আছে কি (বরং দলীয় বিভিন্ন সম্মেলনে তাদেরই চাদা দিতে হয়)? যা দিয়ে তারা নিজের এবং সমাজের সেবা করবে। মেম্বার বা চেয়ার‌ম্যানদের যা ভাতা তা অত্যান্ত অসম্মানজনক। সমাজের সেবা তো দূরের কথা, নিজের সেবা করার জন্য হলেও চুরি করতে হবে। শুধু চাল নয় সাথে ডাল, সবজি, তৈল, যা আছে। এমনকি ইউপি ভবনের ইট হলেও চুরি করতে হবে। এবং যুগ যুগ ধরে হচ্ছেও তাই। 

রাজনৈতিক শিল্পের কারখানাটাই হচ্ছে চোর তৈরির কারখানা। তাহলে তো চোরই তৈরি হবে। যতই চেষ্টা করিনা কেন ময়দার মিল থেকে চাল উৎপাদন একেবারে অসম্ভব।

No comments:

বই পড়ুন

একশো বছর আগে প্রকাশিত যে বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় তা ঐ সময়ের সবচেয়ে ভালো বই। বইয়ের লেখক ঐ সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। লেখক তার সর্বোচ্চ মেধা এবং সবচেয়ে ভালো কথা গুলো লেখেন। সুতরাং বই পড়ছেন তো সবচেয়ে জ্ঞানী লোকের সবচেয়ে ভালো কথা গুলো পড়ছেন।