কোন কিছু খুঁজতে চাইলে, বক্সে লিখুন

Wednesday 9 September 2020

বাসা এবং বাড়ীর প্রার্থক্য

স্যার- উত্তরবঙ্গ তো।

# স্যার আমার ছুটি লাগবে, আমি কালকে বাসা যাবো।

# বাসা যাবা তো ছুটি লাগবে কেন?

স্যার উত্তর বঙ্গ তো! ও আসলে বাড়ী যাবে। একজন সহকর্মী তাচ্ছিল্যর সহিত বললো।  
আমার ফ্রেন্ড এবং তার অফিসের কথোকথন, সাথে আমিও ছিলাম। সেই ২০১২ সালে বাসা এবং বাড়ীর পার্থক্যটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু উত্তর বঙ্গ কথাটি খুব দাগ লেগেছিল। অনেককে জিঙ্গাসা করেছি কেউ সদুত্তর দিতে পারেনি অথবা উত্তরে আমি সন্তুষ্ট হয়নি। গত কয়েকদিন আগে ‘হামার রানীসংকৈল’ ফেসবুক গ্রুপে বাসা এবং বাড়ীর প্রার্থক্য জানতে চেয়ে পোস্ট দিলাম। সুখের কথা, বেশীর ভাগ প্রার্থক্য জানে।
ছোটকাল থেকে বাসাকে বাড়ীর আধুনিক নাম হিসেবে জানতাম। আধুনিক জায়গায় গেলে বিশেষ করে শহরে গেলে বাড়ীকে বাসা বলতে হয়, এটা জানতাম। কিন্তু বাসা এবং বাড়ীর সামান্য প্রার্থক্য আছে। আমার স্থায়ী ঠিকানা হচ্ছে ঠাকুরগাও জেলার রানীসংকৈল এর রামপুর। সুতরাং রামপুর আমার বাড়ী। পঞ্চগড়ে চাকুরির কারনে ভাড়া বাড়ীতে থাকি, পঞ্চগড় আমার বাসা। আমি যেখানে বসবাস করি তা যদি আমার নিজস্ব মালিকানায় হয় তাহলে তা বাড়ী। দশ তলা বিল্ডিং সমস্থটা বাড়ী। বিল্ডিংয়ের প্রতিটি ফ্লোরের প্রতিটি ব্লক এক একটি বাসা। কিন্তু ছোট কাল থেকে লক্ষ্য করছি, গ্রামের লোকেরা কথাই কথাই বাসা যাচ্ছি অথবা আমার বাসা রামপুর। শহরে বন্দরে গেলে বাড়ীকে আরও বেশী বেশী করে বাসা বলে। গ্রামের সবারই তো নিজস্ব বাড়ী আছে, তাহলে তারা বাড়ীকে বাসা বলে কেন? আমাদের পূর্বপুরুষরা সবাই কি ভাড়া বাড়ীতে অথবা অন্যের বাড়ীতে অথবা যাযাবর জীবন যাপন করতো? উত্তর অজানা, তাহলে জেনে নিন।
 বাংলাদেশের বেশীর ভাগ লোক ছিল গরীব এবং অশিক্ষিত। বাংলার পূর্বপুরুষ গরীব এবং অশিক্ষিত ছিল এবিষয়টা তারা বুঝেছিল কিনা আমার সন্দেহ। তাদের শিক্ষার দরকার ছিল তাও তারা মনে করছিল কিনা আমার সন্দেহ। ১৯৪৭ সালের আগে বাঙালী একটা জাতি এটাও তারা মনে করছিল কিনা কে জানে। তবে ভারত বিভাগের পর বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে কিছুটা জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়। নিজেদেরকে বাঙালী জাতি হিসেবে মনে করতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাঙালী প্রায় সবাই মনে প্রানে বিশ্বাস করা শুরু করে আমরা বাঙালী। জাতীয়তা বোধ জাগ্রত হয়। তখনই তারা বুঝতে পারে আমরা গরীব, আমরা অশিক্ষিত। শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। বাংলাদেশে চালু হয় বিভিন্ন ধরনের এনজিও, সংগঠন, গনশিক্ষা কার‌্যক্রম ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠান মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচারনা চালাই। ছড়িয়ে পরে বিভিন্ন গ্রামে। এসব প্রতিষ্ঠানের জনবল তারা প্রায় বেশীর ভাগ শিক্ষিত ছিল। তারা ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে আসতো। যেমন গ্রামীন ব্যংকের ফিল্ড ম্যান (যারা কিস্তি আদায় করে)। গ্রামের মহিলা তাদেরকে সাহেব বলতো। তারা সবাই ভাড়া বাড়ীতে থাকতো। তারা বাড়ী বলতে সবসময় বাসা ব্যবহার করতো। কারন তারাতো বাড়ীতে থাকতো না, তারাতো বাসাতে থাকতো। আর এটাই সব গন্ডগোলের মূল। 
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য তারা তুলনামূলক জ্ঞানীদের, তুলনামূলক স্বচ্ছলদের, তুলনামূলক শিক্ষিতদের অনুসরন করে। গ্রামের পিছিয়ে পড়া অশিক্ষিত লোকজন এসব সাহেবদের অনুসরন করে, তারাও ভুল করে বাড়ীকে বাসা বলা শুরু করে। ধীরে ধীরে এখনকার শিক্ষিতরাও বাসার মধ্যে নিজেদের হারিয়ে ফেলি। ভুলে যায় বাসা এবং বাড়ীর প্রার্থক্য। যারা জীবিকার খোজে ঢাকায় যাচ্ছি তাদের বেশীর ভাগ উত্তরবঙ্গ বলে খোচা মার্কা কথা হজম করছি। 

কেমন লাগল পরামর্শ আশা করছি।

বই পড়ুন

একশো বছর আগে প্রকাশিত যে বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় তা ঐ সময়ের সবচেয়ে ভালো বই। বইয়ের লেখক ঐ সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। লেখক তার সর্বোচ্চ মেধা এবং সবচেয়ে ভালো কথা গুলো লেখেন। সুতরাং বই পড়ছেন তো সবচেয়ে জ্ঞানী লোকের সবচেয়ে ভালো কথা গুলো পড়ছেন।