কোন কিছু খুঁজতে চাইলে, বক্সে লিখুন

Monday 28 January 2019

মায়ের ভালোবাসা (নিঃস্বার্থ নাকি অধিক স্বার্থ)

কালো গাত্রো বর্ণ, গায়ে ময়লার স্পষ্ট ছাপ, চুলগুলো ময়লার আধিক্যের এক প্রকার আঠালো রসের কারনে, চুলগুলো একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে গুচ্ছ আকার ধারণ করেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে উঠতি বয়সী কিশোরীর বেনী গাথা। এই লোকটি প্রতিদিন বাজারের ময়লা কাগজ গুলো কুড়িয়ে ঝুড়িতে ভরছে। ঝুড়িতে জমা করছে। নাকি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কে জানে? ময়লা গুলো কি করে তার ব্যাপার। আপাত দৃষ্টিতে বাজার পরিষ্কার হচ্ছে। নি:সন্দেহে ভালো কাজ। নি:স্বার্থ কাজ। প্রকৃতিকে ভালো রাখার চরম উদাহরণ। নি:স্বার্থ আর স্বার্থ একে অপরের পরিপূরক। স্বার্থ শব্দটির মানে খোঁজার চেষ্টা করলাম। বাংলাসংসদ অভিধানেস্বার্থ কথাটির অর্থ নিজের প্রয়োজন বা কাজ, নিজের উপকার বা লাভ। নি:স্বার্থ শব্দটি খোঁজার চেষ্টা করলাম কিন্তু পাইলাম না। তবে নি: শব্দটির অর্থ- অভাব, নিশ্চয়তা, ইত্যাদির ভাব প্রকাশক। যা অন্য শব্দের পূর্বে বসে ভাব প্রকাশ করে।

তাহলে নি:স্বার্থ মানে বলা যেতে পারে- নিজের উপকার বা লাভের অভাব অথবা নিজের কাজ বা প্রয়োজনের অভাব। তাহলে যে কাজ বা  উপকার নিজের না, এমন কাজ কে নিঃস্বার্থ কাজ বলে। সত্যিকার অর্থে এমন নিঃস্বার্থ কোন কাজ আছে কি? যে কাজে নিজের উপকার বা প্রয়োজন নাই। অনেকে বলবে, স্বামী- স্ত্রী একে অপরের ভালোবাসা। অনেকে বলবে,  পিতা- পুত্র ভালোবাসা। অনেকে বলবে,  মা এবং সন্তানের ভালোবাসা। ঠিক তাই, মা এবং সন্তানের  ভালোবাসা নি:স্বার্থ। জীব জগতের মায়ের ভালোবাসা অতুলনীয়। কিন্তু আসলেই মায়ের ভালোবাসা নি:স্বার্থ কি? সবাই বলে পৃথিবীর কোন প্রাণী নি:স্বার্থ নয়। সৃষ্টিকর্তাও তার সৃষ্টির মুখ থেকে প্রশংসা শুনার জন্য অপেক্ষা করে। আর মা, সেতো একটা ক্ষুদ্র মানুষ। মায়ের ভালোবাসা নি:স্বার্থ, নাকি স্বার্থ, নাকি অধিক স্বার্থ। আসুন আলোচনা করি।
জামাই খুব ভালো, মেয়ে যা বলে তাই শুনে। কিন্তু ছেলেটা আর মানুষ হলো না, বউয়ের কথায় উঠে আর বসে।  # কোটেশনটি মনে রাখুন।#
আমি যখন অনার্সে পড়ি, তিনতলা বিশিষ্ট একটা ফ্ল্যাট ম্যাসে ছিলাম। আমরা ছিলাম ২য় তলায়, ৩য় তলায় বাড়ি ওয়ালা থাকতো। বাড়ি ওয়ালার তিন ছেলে এক মেয়ে সবাই বিবাহিত। সবাই মোটামুটি বেকার বলেই মনে হতো। তাদের প্রায় ঝগড়া লেগেই থাকতো। একদিন ছাদে বাড়ির কর্তীর সাথে আমার গল্প হচ্ছে। তার গল্পে শুনলাম তার মেয়ে অনেক ভালো, তার মেয়ের ইত্যাদি ইত্যাদি গুনাবলী। কিন্তু তার বউমা গুলো প্রত্যেকটি শয়তান। ইত্যাদি  ইত্যাদি খারাপ গুনাবলী। ঘটনা কি সত্য? আমার মনে একটু সন্দেহ জাগলো। তিন তিনটা বউ মা সবাই কি খারাপ। আমি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলাম। পরে  জানতে পারলাম বাড়ির মেয়েটা সব চাইতে বেশী ঝগড়ী এবং মেয়েটি নিজ থেকে ভেগে বিয়ে করেছেন। (জামাই খুব ভালো, মেয়ে যা বলে তাই শুনে। কিন্তু ছেলেটা আর মানুষ হলো না, বউয়ের কথায় উঠে আর বসে। ব্যাপারটা এরকম আরকি।) বাংলাদেশের (আমার মনে হয় সারা বিশ্বের) সব বউমা গুলো খারাপ। আমার বাড়ীতে বউ মা নামে যে লোকটি আছে, শাশুড়ীর কাছে সেও খারাপ। আপনার বাড়ীতে বউমা নামে যে লোকটি আছে, সেও কিন্তু শাশুড়ী নামে লোকটির কাছে খারাপ। অপরপক্ষে আমার বাড়ীতে মেয়ে নামে যে প্রানীটি, অন্য বাড়ীতে কোন এক শাশুড়ীর বউমা সে মায়ের কাছে ভালো কিন্তু শাশুড়ীর কাছে. . . . ?
আমি যখন ছোট - ক্লাস থ্রি, ফোর কিংবা ফাইভে পড়ি। ঘটনাটা পুরোপুরি মনে নাই। আমার খালাতো বোনের বিয়ে অথবা খালাতো ভাইয়ের খ্যাৎনা অনুষ্ঠান। আমরা খালা-মামা-মামিরা সবাই অনুষ্ঠানে। আমার সমবয়সী মামাতো ভাই এবং আমি এক সাথে আছি। মামি চুপ চুপ করে রসগোল্লা (মিষ্টি) মামাতো ভাইকে দিচ্ছে। একবার দিলো- আমি হয়তো ভাবলাম একটাই ছিল তাই আমাকে দিল না। আর একবার দিলো - আমি হয়তো ভাবলাল এর পরে আমার পালা। আর একবার দিলো কিন্তু আমার পালা আর এল না। একবার ভাবুন তো ছোট দুইটা বাচ্চা একসাথে, একজন মিষ্টি খাচ্ছে আর একজন হা করে তাকিয়ে আছে। ঐদিনের ঘটনাটা স্পষ্ট মনে নাই। কিন্তু ঐদিনের কষ্টটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। মামি আমার কষ্টটা বুঝে উঠতে পারে নাই। কারণ আমি তার সন্তান না। মামি একজন মা, মমতাময়ী মা, নিঃস্বার্থ ভালবাসায় পরিপূর্ণ একজন মা। কিন্তু আমার তো মামি। যেহেতু আমার মামি, সেহেতু আমার জন্য কোন ভালোবাসা নাই। আমার জন্য স্বার্থযুক্ত কিংবা নি:স্বার্থ কোন ভালোবাসাই নাই।
অপরপক্ষে আমার মা কত ভাল। এখন আমি বড় হয়েছি, চাকুরীও করি। নিজের প্রয়োজন মোটামুটি নিজে মিটাতেও পারি। তারপরেও আমার জন্য আমার মায়ের টেনশনের নিখাদ আভাস আর দ্বিতীয় কারও কাছে দেখি নাই। কারন তিনি আমার মা। তিনি আমাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসেন। চরম মাত্রাই নিঃস্বার্থ ভালোবাসেন। মায়ের নি:স্বার্থ ভালবাসা। অধিক মাত্রায় নি:স্বার্থ ভালবাসা। চরম অধিক মাত্রাই নি:স্বার্থ ভালবাসা। যা শুধু মাত্র সন্তানের জন্য। আমার ম্যাস জীবনের বাড়ীর কর্তীর কথা চিন্তা করুন। তার মেয়ে অনেক ভালো। কারন সে ঐ মেয়ের মা। কারন সে তার সন্তানকে অধিক নিঃস্বার্থ ভালোবাসেন। তার মেয়ের প্রতি অধিক মাত্রায় নিঃস্বার্থ ভালবাসার কারনে বউমা গুলো শাশুড়ীর ভালোবাসা পাইনি। মায়ের চরম অধিক মাত্রাই নি:স্বার্থ ভালবাসার কারনে, আমার মামাতো ভাই মায়ের ভালবাসা পাইলেও আমি মামির ভালবাসা পাইনি।
আমার ছোট কালে ৯০ এর দশকে। আমার পরিবারে কিংবা পাশের দুই মহিলার ঝগড়ার অন্যতম কারন ছিল তাদের সন্তান। দুই ছোট সন্তানের তুচ্ছ ঘটনা যেমন- একজনের মার্বেল একজন নিয়ে গেছে। একজনের তাস (দিয়াশালাই এর অবশিষ্ট) একজন ছিড়ে ফেলেছে। একজনের মাথায় অন্যজন ধুলা ছিটিয়ে দিয়েছে। একজনের খেলার জায়গায় অন্যজন দখল করে নিয়েছে ইত্যাদি। এসব তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে চলতো তুমুল ঝগড়া। দুই মায়ের বক্তব্য এরকম “আমার সন্তানকে তোর সন্তান কেন কষ্ট দিবে”। এসব ঝগড়া প্রভাব বিস্তার করতো পুরুষের মাঝেও। মাঝে মাঝে খুনা খুনি হয়েছে, এমন নজিরও আছে। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে হয়েছে বিচ্ছেদ। শুধু প্রতিবেশী কেন। দুই ভাইয়ের মধ্যেও হয়েছে বিচ্ছেদ। মা তার সন্তানের সামান্য কষ্ট সহ্য করতে পারে না। সন্তানের কষ্টের প্রতিশোধ হিসেবে অন্যের সন্তানকে আঘাত করতেও পিছপা হয়না। যদিও ঐ সন্তানটি অন্য কোন মায়ের।  তুমি কারও সন্তান কিনা, তা আমার বিবেচ্য বিষয় না। তুমি কষ্ট পাও কিনা, তা আমার বিবেচ্য বিষয় না। আমার সন্তান যেন কষ্ট না পাই। সন্তানের প্রতি মায়ের চরম নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
প্রতিটি মায়ের চরম অধিক নি:স্বার্থ ভালবাসার কারনে সন্তানেরা ভালবাসা পাইলেও, অন্যরা পাই কষ্ট, অন্যরা হয় ধ্বংস। মায়ের ভালবাসা সন্তানের জন্য চরম নি:স্বার্থ হলেও অন্যের জন্য চরম বিধ্বংসী। আমরা জানি অধিক কোন কিছুই ভালো না। মায়ের অধিক নিঃস্বার্থ ভালোবাসাও চরম নিঃস্বার্থ থেকে চরম স্বার্থপরতা রূপ গ্রহন করে।
লেখার শুরুতে কালো গাত্র বর্ণের লোকটির কথা বলেছিলাম। বাজার থেকে কুড়িয়ে ঝুড়িতে জমা করা কাগজের টুকরোর ময়লাগুলো, আরও ছোট ছোট টুকরো করে অন্য এক বাজারে উড়িয়ে দিচ্ছে। এক বাজারের জন্য চরম নি:স্বার্থ ভালবাসা হলেও অন্য বাজারের জন্য চরম বিধ্বংসী। বিধ্বংসী ভালোবাসা।




কেমন লাগল পরামর্শ আশা করছি।

বই পড়ুন

একশো বছর আগে প্রকাশিত যে বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় তা ঐ সময়ের সবচেয়ে ভালো বই। বইয়ের লেখক ঐ সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। লেখক তার সর্বোচ্চ মেধা এবং সবচেয়ে ভালো কথা গুলো লেখেন। সুতরাং বই পড়ছেন তো সবচেয়ে জ্ঞানী লোকের সবচেয়ে ভালো কথা গুলো পড়ছেন।