কোন কিছু খুঁজতে চাইলে, বক্সে লিখুন

Wednesday 6 December 2017

সরকারী প্রাইমারী স্কুলের, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির দ্বায়িত্ব কি?


শিক্ষাই একমাত্র একটা জাতির, একটা গোষ্ঠীর, একটা পরিবারের, একজনের উন্নতির অন্যতম হাতিয়ার। জাতিকে যদি ইমারত হিসেবে কল্পনা করা হয়, তাহলে ঐ ইমারতের ভিত্তি মজবুত করা খুবই বেশী জরুরি। প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে জাতির ইমারতের ভিত্তি যে জাতির প্রাথমিক শিক্ষা যত বেশি মজবুত হবে ঐ জাতি তত বেশি টেকসই হবে। ইমারতের ভিত্তি যদি নড়েবড়ে হয়, তাহলে যে কোন সময় রানা প্লাজার মতো ধস করে পড়ে গিয়ে সব শেষ করে, নিঃস্ব হয়ে পড়তে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে মজবুত করতে হলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত, সুশৃঙ্খল করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা কতটুকু মজবুত তা একটু দেখে আসা যাক।

প্রথমেই আসি প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রসঙ্গে। আমার এক পরিচিত প্রাইমারি স্যার, তার স্কুলের প্রাইমারি সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন- “তোমরা পরীক্ষার হলে কোন শিক্ষকের কাছে থেকে শিখিয়ে নিবে না। পরীক্ষার হলে দেখা-দেখি করার সুযোগ থাকলে নিজেরা নিজেরা দেখা-দেখি করবা।” আমি ঐ স্যারকে জিঙ্গাসা করলাম- “নিজেরা নিজেরা দেখা-দেখি করবে কিন্তু কোন স্যারের কাছে শিখিয়ে নিলে সমস্যা কি?” তাহার উত্তর ছিল “কোন না কোন টিচার দ্বায়িত্বে থাকে, কি না কি ভুল-ভাল শিখিয়ে দিবে, তার কি কোন ঠিক আছে।”  কি আশ্চর্য! এই হচ্ছে প্রাইমারী স্কুলের এক টিচার সর্ম্পকে আর এক টিচারের ধারনা। একজন প্রাইমারী স্কুলের টিচার, আর একজন টিচার সম্পর্কে যতটা জানে আমরা অন্যরা তার থেকে অনেক অনেক কম জানি।

আমার আর এক পরিচিত জুনিয়র ভাই প্রাইভেট ব্যাচ পড়াই। তার কাছে থেকে শুনা, জুনিয়র লেভেলের এক ছাত্র তার শিক্ষককে জিঙ্গাসা করেছে “ স্যার ট্রাকের গায়ে লেখা থাকে সমগ্র বাংলাদেশে ২৭ টন। এর মানে কি?” শিক্ষক উত্তর দেয়-“সমগ্র বাংলাদেশের ওজন ২৭ টন।” এই হচ্ছে আমাদের শিক্ষার অবস্থা। ঘটনাটি সত্য, নাকি মিথ্যা। আমি জানি না। তবে এরকম নাজেহাল শিক্ষা অবস্থা বাংলাদেশের সর্বত্র। আমার এক ATEO (Assistant Thana Education Officer) বন্ধু কে জিঙ্গাসা করেছিলাম, শিক্ষার অবস্থা এত খারাপ কেন? এক কথায় তার পক্ষে উত্তর দেওয়া প্রায় অসম্ভব। অনেক গুলো কারনের মধ্যে তার মতে সবচেয়ে বেশী যেটা ফুটে ওঠে। তা হল- সদ্য ২৬ হাজার সরকারী স্কুলের শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি দায়ী। আমার কাছেও তাই মনে হয়। এসব শিক্ষকদের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে পারেনি। সদ্য ২৬ হাজার সরকারী স্কুল যেমন দায়ী, বাকী পুরনো ৩৭ হাজার সরকারী স্কুল কিন্তু কম দায়ী নয়। আমার ATEO বন্ধু ATEO দের দায় এড়িয়ে গেছেন। আমি মনে করি তারাই সবচেয়ে বেশি দায়ী। একটি প্রাইমারী স্কুল বছরে প্রায় ১ লক্ষ টাকা ফিক্সড বাজেট পাই। প্রতি বছরে SLIP(School Level Improvement Plan)  বাবদ ৪০,০০০ হাজার টাকা। প্রি-প্রাইমারী খেলনা বাবদ ৫০০০ হাজার টাকা। মোট ৪৫০০০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে প্রধান শিক্ষকের অন্যান্য খরচ বাবদ ৫০০০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে একজন প্রধান শিক্ষক প্রতি বছরে পাই প্রায় ৬০০০০ হাজার টাকা। প্রতি বছরে একটি স্কুলের জন্য বরাদ্দ  (৪৫০০০+৬০০০০)  প্রায় ১ লাখ টাকা। রানীসংকৈল উপজেলায় প্রাইমারী স্কুল প্রায় ১০০ টি। সেই হিসাবে প্রতি উপজেলায় প্রতি বছরে শুধু মাত্র পাইমারী স্কুলের জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দ। আমি বলবো সব টাকা TEO এবং ATEO রা ভাগ বাটোয়ারা করে লুটেপুটে খাই। প্রধান শিক্ষকদের সভাপতির স্বাক্ষর জাল করার নজিরও আছে। এখান থেকে কিছু টাকা প্রধান শিক্ষক পাইলেও আমি মনে করি সব দায়ভার TEO এবং ATEO দের। তদারকির দ্বায়িত্ব তো তাদের হাতে। প্রধান শিক্ষকদের গাফলাতির দায়ভার তাদের। অনেক অভিজ্ঞ জন বলতে পারেন SMC (School Management Committee) কমিটি কি করে? বাংলাদেশে প্রাইমারী স্কুল প্রায় ৭০ হাজার। ৭০ হাজার স্কুলের SMC কমিটির ৭০ হাজার সভাপতি এবং প্রায় ৬ লক্ষ সদস্য (প্রতি কমিটিতে ১০ বা ০৯ জন সদস্য)। আমি খুব জোর গলাই বলতে পারবো এদের কেউ কি জানে, তাদের দ্বায়িত্ব কি? কেউ জানে না। ৩% জানে কি না আমার সন্দেহ। বেশীর ভাগ পদ পদবি জন্য ব্যাস্ত। কেউ জানেন না তাদের দ্বায়িত্ব কি? কমিটির লোকজন তাদের দ্বায়িত্ব সম্পর্কে জানেন না কেন? এর দায় ভার কার? যারা জানেন না তাদের, নাকি অন্য কারও। 

এরা কি নিজে থেকে জানতে চাইনা, নাকি জানতে দেওয়া হয়না। জানার ইচ্ছা নাই এমন লোক খুজে পাওয়া খুব বিরল। আসলে এদের জানতে দেওয়া হয়না। স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা, ATEO বা TEO রা এদের জানতে দেয়না। এরা জানলে ভাগে কমে যেতে পারে অথবা ভাগ বাটোয়ারাই সমস্যা হতে পারে। এরা এদের দ্বায়িত্ব সম্পর্কে জানলে গ্রামাঞ্চলের স্কুল গুলোর মান কিছুটা হলেও ভাল হবে। কমিটির পদ পদবি নিবে, কিন্তু দ্বায়িত্ব কি- জানবে না, কাজ করবে না। শুধু পদ নেওয়ার জন্য নিজের ভাইয়ে-ভাইয়ে, চাচা-ভাতিজা মারামারি করবে। এটা তো কোন ভাবেই কাম্য নয়। কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে, নয়তো কমিটি নামক জিনিসটা বাদ দিয়ে দিতে হবে। ৭০ হাজার প্রাইমারী স্কুলের ৭০ হাজার SMC কমিটির সভাপতিকে এবং তার সদস্যদেরকে তাদের দ্বায়িত্ব সর্ম্পকে জানতে দেওয়া উচিত। এদের জানার ব্যবস্থা করা উচিত। এরাই একমাত্র  প্রাইমারী স্কুলের জনগনের প্রতিনিধি। বাকীরা সবাই তো সরকারী প্রতিনিধি।

থানা পর্যায়ে (SMC ) কমিটির বছরের দুইবার না হোক কমপক্ষে একবার সম্মেলন আয়োজন করলে স্কুল ব্যবস্থাপনায় অনেক উপকার হবে। কমপক্ষে কমিটির লোকেরা জানতে পারবে, তাদের কাজ কি। কেন তারা ভাইয়ে-ভাইয়ে মারামারি করে পদ বা পদবি গ্রহন করেছে। কমপক্ষে ATEO বা প্রধান শিক্ষকেরা এত উন্মুক্ত ভাবে ভাগ বাটোয়ারা করতে পারবে না।



কেমন লাগল পরামর্শ আশা করছি।

No comments:

বই পড়ুন

একশো বছর আগে প্রকাশিত যে বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় তা ঐ সময়ের সবচেয়ে ভালো বই। বইয়ের লেখক ঐ সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। লেখক তার সর্বোচ্চ মেধা এবং সবচেয়ে ভালো কথা গুলো লেখেন। সুতরাং বই পড়ছেন তো সবচেয়ে জ্ঞানী লোকের সবচেয়ে ভালো কথা গুলো পড়ছেন।