কোন কিছু খুঁজতে চাইলে, বক্সে লিখুন

Sunday 15 April 2018

রামপুরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা

রামপুরের অর্থনৈতিক অবস্থাঃ

আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো এই কথাটা যে কেউ সহজে মেনে নিবেন। বরং যদি বলা হয় আমরা এখনও অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল তাহলে অনেকে মেনে নিবেন না। আজ থেকে প্রায় ৩৫-৪০ বছর আগে রামপুরের সবচেয়ে ধনবান ব্যাক্তিটি তার সন্তানের জন্য একটা ইংলিশ প্যান্ট কিনতে কয়েকবার চিন্তা করতো। যারা আমার মুরব্বি তারা আমার চেয়ে অনেক ভালো জানেন। আপনাদের কাছে গল্প শুনে শুনে আমার এই ধারনা, কারন তখনও আমার জন্ম হয়নি। কিন্তু যদি আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগের অর্থনৈতিক অবস্থা দেখি, আমার স্পষ্ট মনে
আছে আমার আশে পাশের প্রায় সবাই দিন মজুর। যেদিন কাজ নাই সেদিন খাবার নাই। বাড়ীর মহিলারা বাড়ী থেকে বের হয়ে জওগাঁও অথবা হাড়িয়ার দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে, কখন আমার স্বামী আসবে, আমার পেটের খিদা নিবারন করতে। কেউ হয়ত সারাদিন অনাহারে আছে। কেউ হয়ত কচুর মুড়া খেয়ে, কেউ হয়ত ভাতের মার খেয়ে পেটকে সান্তনা দিচ্ছে। আমার বংশের প্রায় সবাই দিন মজুর, আমার গ্রামের প্রায় সবাই দিন মজুর। এটা আমার জন্য খুব কষ্টের, চরম কষ্টের। আমার মনে হয় এই কষ্ট শুধু আমার নয়, এই কষ্ট রামপুরের সবার। আমি এটা মনে প্রানে বিশ্বাস করি। কারন রামপুরেতো আমি আপনি সবাই বাস করি। রামপুরে তো আপনার আমার বাবা, মা, ভাই বোন, আমার সন্তান, আমার পরিবার সবাই বাস করে। এই কষ্ট থেকে আমি মুক্তি চাই, এই কষ্ট থেকে আমরা সবাই মুক্তি পেতে চাই। আমরা সবাই মিলে ঐক্য মত গড়ে তুলতে পারলে, সবাই মিলে রামপুরের জন্য একটু একটু করে চিন্তা করলে, আমরা পারবো রামপুরকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে।
বর্তমান সময়ে আমরা কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি। এখন আর আগের মতো এরকম ছেলে বা মেয়ে খুজে পাওয়া একেবারে অসম্ভব, যারা চার পাঁচ ভাই বোন মাটির চৌকিতে বিছানা করে গাদাগাদি করে শুয়ে আছে। বিছানায় প্রসাব করে মাটির চৌকি কাদা করে দিয়েছে তার পরেও কাদার উপর শুয়ে আছে। ঐ দিনের কথা গুলো আমি ভুলতে পারি না। আমার চাচা চাচী, আমার দাদা-দাদী, আমার প্রতিবেশীর চরম কষ্ট গুলো ভুলতে পারি না। আসুন সবাই মিলে চরম কষ্ট গুলো ভুলাতে, ভেদাভেদ ভুলে রামপুরটাকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্টা করতে এগিয়ে আসি। কারন রামপুরতো আপনার গ্রাম, আমার গ্রাম সবার গ্রাম।
বর্তমানে অর্থনৈতিক দেন্য থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি অর্জন করতে পেরেছি। আমরা মোটামুটি স্বাবলম্বি। আজকে আমরা ইংলিশ প্যান্ট কেন কমপ্লিট ড্রেস, শার্ট - সুট, সাফারী কিনতে পারি। এবং অন্যকে সাহায্য করতে পারি। অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি অর্জন করার পরে আমরা সামাজিক ভাবে মর্যদাবান হতে পারিনি। কারন আমরা সবে মাত্র অর্থনৈতিক ভাবে কিছুটা স্বাবলম্বি অর্জন করতে পেরেছি। এত দিন আমরা টাকা পয়সা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম, তাই সামাজিক মর্যাদার দিকে নজর দিতে পারিনি।

রামপুরের সামাজিক অবস্থাঃ

আমরা রামপুর বাসী কখনও সামাজিক ভাবে মর্যাদা বান ছিলাম না । আমাদের তো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ছিল না, তাহলে সামাজিক মর্যাদাবোধ জাগ্রত হবে কেমন করে। আমরা অনেক আগে থেকে অসামাজিক কাজ নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। আমরা ব্যাস্ত ছিলাম এই বাড়ীর মেয়েকে ঐ বাড়ীর ধনবান ছেলের সাথে কেমন করে কিছু একটা করে দিতে পারি। অথবা ঐ বংশের ছেলে কেন আমাদের বংশের মেয়ের সাথে প্রেম করবে। বা ঐ ছেলেটি সেই মেয়েটির পেট করে দিয়েছে। আমরা ব্যাস্ত ছিলাম চাচা-ভাতিজা বা ভাইয়ে-ভাইয়ে এক বিঘা জমি নিয়ে মারামারি করতে। জমির মূল্য এক লাখ টাকা কিন্তু মারামারি করতে  খরচ করবো তিন লাখ টাকা তাতে কোন অপত্তি নাই। আমরা সব সময় ঐসব অসামাজিক কার্যকলাপ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের সমস্যা গুলো আমরা নিজেরা সমাধান করতে কখনও পারিনি বা আমার সমস্যা সমাধান করে দিতে পারে, এমন কাউকে বিশ্বাস করতে পরিনি। এমনকি আমাদের ঝগড়া মিটমাট করার জন্য বাইরে থেকে ভাড়াটে নেতা ভাড়া করে নিয়ে আসতাম। এর কারন কি? আপনারা জানেন-। আমাদের যোগ্য লোকের খুব অভাব ছিল, এখনও আছে। এই অভাব টা আমরা নিজেরা এখনও তৈরি করে রেখেছি। আমরা যোগ্য লোক তৈরি করতে পারি নি। আমরা কাউকে যোগ্য করে তুলতে সাহায্য করিনি। এখানেও আমরা হীনমন্মতার পরিচয় দিয়ে আসছি। সামান্য একটা ইউ পি মেম্বার নির্বাচিত করে বের করবো তাও ঠিক মত করে পারি না। চেয়ারম্যান বা অন্য বড় কোন কিছু করা তো দূরের কথা। আমরা কতটা অযোগ্য সামাজিক ভাবে।  আমাদের সবার মধ্যে একটা ভাব আছে, “আমি কম কিসে, আমি কি ওর চেয়ে কম যোগ্য। আমি সবচেয়ে যোগ্য।”
আমাদের মধ্যে সামাজিক মর্যাদাবোধ জাগ্রত হচ্ছে। আমরা সামাজিক হচ্ছি তবে ওল্টো পথে, যে ভাবে হওয়ার কথা সে ভাবে না। আমরা আমার নিজের মর্যাদাবোধ নিয়ে ব্যাস্ত, সব সময় আমি আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত। আমাদের মর্যাদা বোধ জাগ্রত হচ্ছে আত্মকেন্দ্রিক। আমরা এখন নিজের আত্মমর্যাদা নিয়ে ব্যাস্ত। আমরা আত্মকেন্দ্রিক হতে বাধ্য হচ্ছি সামাজিক চাপে, পারিবারিক চাপে, ব্যাক্তিগত চাপে। যে কাজে ব্যাক্তিগত কোন লাভ নাই এমন সামাজিক ভাল কাজ করতে শুরু করলে সমাজের প্রায় সবাই আপনাকে বাধা দিবে। বলবে “তোমার এসব কাজ করে কি লাভ।” বাধা দিবে আপনার পরিবার থেকে। বাবা মা ভাই বোন সবাই বাধা দিবে। আপনার স্ত্রীতো অবশ্যই বাধা দিবে। স্ত্রী বাধা না দিলে তার স্ত্রীত্ব নিয়ে লোকে প্রশ্ন তুলবে, বলবে “ এসব কাজ থেকে তোমার স্বামীকে আটকাতে পার না, কেমন বউ তুমি।”  এত বাধা পেরিয়ে সামাজিক কোন কাজ করতে আমার আপনার সামর্থ থাকে না । আমি হয়ে যায় ব্যাক্তিকেন্দ্রিক, আত্মকেন্দ্রিক।
আমরা সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করি না তাই আমাদের সামাজিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে  যোগ্য লোক পাই না। জ্বলন্ত উদাহরন: আমাদের ঈদগা। আমাদের ঈদগাতে তেমন আয়ও নাই ব্যয়ও নাই কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যে দু একবার সভাপতি বদল হয়ে গেছে। মসজিদ একটি অন্যতম সামাজিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এখানে তো সমস্যা লেগেই আছে। এখনও মসজিদটি পাকা করতে পারি নাই। উপযুক্ত বেতন ভাতা দিয়ে ঈমাম মুয়াজ্জিম রাখতে পারি নাই। রামপুর তরুন সংঘ নিয়ে কিছু বলতে হবে বলে মনে হয় না। গত কয়েকদিন আগে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করবো তাতেও কত ঝামেলা। ভোট করতে হবে, টাকা পয়সা খরচ করতে হবে। আমাদের অর্থনীতির অন্যতম হাতিয়ার রামপুর বাজার বাইরের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। রামপুরের অর্থনৈতিক,  সামাজিক, ব্যক্তিগত  উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি, অন্যতম হাতিয়ার রামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর অবস্থা কারও জানা নাই, বলে আমার মনে হয় না। স্কুলে জমি নাই, প্রধান শিক্ষক নাই কত ঝামেলা।

পরিশেষঃ

আমরা কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি হতে পেরেছি। ব্যাক্তিগত মর্যাদা রক্ষা করতে সব সময় তৎপর আছি। এবার আমাদের সবার দ্বায়িত্ব হচ্ছে রামপুরকে সামাজিক মর্যাদাবান গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য আমাদের কাজ করতে হবে একসাথে ব্যাক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে। আসুন কিশোর তরুন যুবক বৃদ্ধ সবাই মিলে রামপুরকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করি। ২০-২৫ বছর আগের চরম কষ্ট গুলো নিবারন করি।


মো: আবুল কালাম আজাদ
রামপুর, রানীসংকৈল, ঠাকুরগাঁও
E-mail: akdazad@gmail.com
Blog  : kobihat.blogspot.com


কেমন লাগল পরামর্শ আশা করছি।

No comments:

বই পড়ুন

একশো বছর আগে প্রকাশিত যে বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় তা ঐ সময়ের সবচেয়ে ভালো বই। বইয়ের লেখক ঐ সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। লেখক তার সর্বোচ্চ মেধা এবং সবচেয়ে ভালো কথা গুলো লেখেন। সুতরাং বই পড়ছেন তো সবচেয়ে জ্ঞানী লোকের সবচেয়ে ভালো কথা গুলো পড়ছেন।