কোন কিছু খুঁজতে চাইলে, বক্সে লিখুন

Tuesday, 22 September 2020

বুড়ো বাড়ি

An old age home.

আমি একটি বৃদ্ধাশ্রম করতে চাই। যেখানে প্রযুক্তির সব অধুনিক সুবিধা থাকবে। থাকবে প্রতি দশ বছর পর পর রিঅ্যরেন্জ করার সিস্টেম। আমি হবো বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা। সুতরাং নিপুন ছোয়ায় করতে চাই বৃদ্ধাশ্রম। শেষ বয়সের আবাসস্থলটি সবচেয়ে ভালো করার টার্গেট সবারি থাকে। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ বা গ্রহণ সে যাই হোক, তাতো এখানেই ঘটবে। মরার সময় কোনটা ঘটে- শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ নাকি গ্রহন। গ্রহণ হলে সমস্যা নেই কারন সেতো আমার সাথে কবরে যাবে। কিন্তু ত্যাগ হলে সেই তো সাক্ষী হয়ে থাকবে যুগ যুগ। গাফিলাতির সুযোগ নেই। যতদূর সম্ভব ভালো মনোযোগ দিব।
আমার মেয়ের বয়স দুই বছর। মেয়েকে যেভাবে বড় করছি অথবা বড় করবো তাতে আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হবে। আমার মেয়ে হাজার চেষ্টা করবে আমাকে তার কাছে রাখতে। আমিও হাজার চেষ্টা করবো তার সাথে থাকতে। কিন্তু দুজনে ব্যর্থ হয়ে যাবো। দুজনে কাদবো, বোবা কান্না কিংবা চিৎকারে কান্না। সে যাই হোক কাদবো, খুবই কাদবো। কান্নাও ব্যর্থ হবে। আমি হবো বৃদ্ধাশ্রমের মানুষ। 
আমরা দুই বোন এবং পাঁচ ভাই। বাবা কৃষক এবং ব্যবসায়ী দুইয়ের মাঝামাঝি ছিলেন। আমরা এতগুলো সন্তান সুযোগ সুবিধা খুব কমই পেয়েছি। তাছাড়া আমাদের সময় এত সুবিধা ছিলও না। সামান্য সুবিধা নিয়ে পড়াশোনা করেছি। এ পড়াশোনা শুধু চাকরির জন্য। পড়াশোনা কর একটা চাকরি করতে হবে। পড়াশোনা কর একটা চাকরি করতে হবে। কতবার যে শুনেছি এই বাক্যটি। চাকরি করছি খুব ছোট চাকরি। বাড়ী থেকে প্রায় ১০০ কিমি দূরে। বাবা মারা গেলেন কিছুদিন আগে। মা আছে অন্য ভাইদের সাথে। কিন্তু আমি যখন বৃদ্ধ হবো আমি কোন সন্তানের কাছে থাকবো। কে আমাকে আগলে রাখবে। কে আমাকে যত্ন করবে। কেউ না। তাই বৃদ্ধাশ্রম আমার আবাসস্থল। 
আমার স্কুল জীবনের ফেন্ড রাসেল ঢাকায় চাকরি করে। ওর সন্তান অবশ্যই ঢাকায় বড় হবে। নাহিন সহ অন্য বন্ধগুলো প্রায় সবাই নিজ শহর বা নিজ এলাকাবাদে ভিন্ন শহরে চাকরির সুবাদে বসবাস করছে। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলো অচেনা শহরে অতিবাহিত করবো বা করছি। আমাদের সন্তানেরা অচেনা, অজানা শহরে বড় হবে। আমাদের সন্তানদের চাচাতো, মামাতো বা ফুপাতো ভাই বা বোনদের প্রতি কোন ভালবাসা নেই। এমনকি আমাদের সন্তানদের এসব ভাইবোন আছে তারা তা ভালো করে জানেই না। তাদেরকে শিখানো হচ্ছে ক্যরিয়ার। শুধু ক্যরিয়ার। আমরা অনেকে বাড়ী গাড়ী কিনে ঐ শহটাতে স্থায়ী হয়ে যাবো। শহরটাকে আপন করার প্রাণ পন চেষ্টা করবো। কিন্তু এ শহর তো আমার আপন না। এখানে তো আমার কেউ নেই। বাবা নেই, মা নেই, ভাতিজা নেই, ভাগিনি নেই। আছে শুধু কৃত্রিম প্রতিবেশীরা। আছে শুধু আমার দুইটা সন্তান, ক্ষেত্র বিশেষে একটা। এই একটি সন্তান আমার সব আশা, ভালবাস, চাওয়া, পাওয়া। সব নেই নেই সন্তানের মাঝে খুজে ফিরি। আমার অজান্তে নেই নেই এর শূন্যতা পূরণ করতে চাই সন্তান দিয়ে। সন্তানটি হয়ে যায় একসাথে ছেলে, মেয়ে, ভাতিজা, ভাগিনা। বাবু এটা করো, বাবু এটা পড়ো, বাবু এভাবে করো, বাবু এভাবে পড়ো। ইত্যাদি ব্যস্ততায় সে বড় হয়। সে সত্যি অনেক বড় হয়। আমি মহাখুশি। বাবুর ব্যস্ততা বাড়তে থাকে আমার ব্যস্ততা কমতে থাকে। আমি ছোট চাকরি করি তাই হয়তো বাবা-মার কাছ থেকে ১০০ কিমি দূরে আছি। আমার বাবু বড় চাকরি করবে, বাবু থাকবে আমার কাছ থেকে ১০০০ কিমি কিংবা আরো দূরে। আমি ছোট চাকরি করি আমার ব্যস্ততা কম। বাবু অনেক বড় চাকরি করে ওর ব্যস্ততা অনেক বড়। 
আমার বাবার আরোও চারজন ছেলে সন্তান আছে। আরোও ভাতিজা-ভাতিজি আছে। আরোও ভাগিনা-ভাগিনি আছে, আরোও অনেক প্রতিবেশী আছে, কৃত্রিম নয় সত্যিকার প্রতিবেশী। আরোও শত শত আত্মীয়-স্বজন, শত শত শুভাকাঙ্খী আছে। অবসর সময় গুলো ঠিক সুন্দরভাবে কেটে গেছে। আমার মার সময় গুলো কেটে যাবে খুব ভালভাবে। 
আমার বৃদ্ধ বয়সে অবসর সময় গুলোতে কে থাকবে সাথে। বাবু ছাড়া আর কে আছে আমার। কেউ তো নেই। নেই প্রতিবেশী, নেই আর কোন সন্তান। নেই! শুধু নেই। নেই আর নেই। শূন্যতায় ভরপুর। আছে শুধু বৃদ্ধাশ্রম। আমার অজান্তে সারাজীবন তিল তিল করে গড়ে তোলা বৃদ্ধাশ্রম। আমার শেষ আশ্রয়। আমার শেষ সম্বল। আমার পূর্ণতা। 

নিজের নিপুন হাতের ছোয়ায় গড়ে তোলা বৃদ্ধাশ্রম।

বই পড়ুন

একশো বছর আগে প্রকাশিত যে বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় তা ঐ সময়ের সবচেয়ে ভালো বই। বইয়ের লেখক ঐ সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। লেখক তার সর্বোচ্চ মেধা এবং সবচেয়ে ভালো কথা গুলো লেখেন। সুতরাং বই পড়ছেন তো সবচেয়ে জ্ঞানী লোকের সবচেয়ে ভালো কথা গুলো পড়ছেন।