কোন কিছু খুঁজতে চাইলে, বক্সে লিখুন

Monday 21 June 2021

একখন্ড জমির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবাদ।

এক খন্ড জমি, যার নাম জমির উদ্দীন। তার মেজাজ বেজায় খারাপ। তার কাছে মরণাস্ত্র থাকলে সে আক্কু অথবা পাক্কুর, যে কোন একজনকে খুন করে ফেলতো এবং তাকে নিয়ে টানাটানির সমাপ্তি ঘটাতো। কিন্তু জমির উদ্দীনের তা নেই। এ নিয়ে জমির উদ্দীনের কষ্ট প্রচুর। আক্কু এবং পাক্কু এরা দুজনে জমিরউদ্দীনকে চাই। জমিরউদ্দীনকে পাওয়ার জন্য এরা গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে মারামারিতে লিপ্ত। আক্কু প্রায় নি:স্ব। বাবার পাওয়া সব সম্পত্তি প্রায় শেষ। সব শেষ করবে, কিন্তু জমির উদ্দীনকে তার চাই চাই। গত দিন আক্কু আর পাক্কু দুজনে চরম মারামারি, এতে তাদের বউ বাচ্চারাও অংশগ্রহন করে। আক্কুর মাথা ফেটে অবস্থা চরম খারাপ। আক্কু মরে যাবে কিন্তু জমীর উদ্দীনকে তার চাই। পাক্কু, আক্কুর চেয়ে অনেক বেশী চালাক। আক্কুকে নিয়ে জমীর উদ্দীনের চিন্তার শেষ নাই। দূর্বলদের সবাই মমতা দেখায়। আক্কু দূর্বল, বোকা এ কারনে হোক অথবা আক্কুর প্রতি ভালবাসা বেশী, যে কারনেই হোক, আক্কুর প্রতি জমীর উদ্দীনের ক্ষোভও প্রচুর। পাক্কুর চালাকির কারনে পাক্কুকে জমীর উদ্দীন কম পছন্দ করে। জমীর উদ্দীন ক্ষিপ্ত হয়ে বিড় বিড় করে আক্কু এবং পাক্কুকে চরম গালিগালাজ করছে। জমীর উদ্দীন বলছে-

আক্কু আর পাক্কু তোমরা দুজনে আমাকে দাবি করছো কেন। আমি তোমাদের, এটা দাবি করছো কোন যুক্তিতে। আমাকে পাওয়ার জন্য তোমরা কতটুকু কষ্ট করেছ? কোন পরিশ্রম করছো কি? যা কষ্ট করছে তা তোমাদের দাদা। তোমাদের দাদা দু‘এক বেলা কম খেয়ে অথবা না খেয়ে, হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে টাকা জমিয়ে আমাকে কিনেছে। তোমাদের বাবারা আমাকে ভাগ করতে গিয়ে মারামারির ক্ষত আজও শুকাইনি। আমাকে নিয়ে তোমার বাবারাও যুদ্ধ করতে করতে জীবন শেষ করলো। এখন তোমরা শুরু করছো। কেন তোমরা এমন করছো? আক্কু, পাক্কু তোমরা ‍দুজনে আমাকে চাও কেন? কি অধিকার তোমাদের আছে। যাও দাদার মতো কষ্ট করো। আমার মতো অন্য কাউকে খুজে নাও। আমাকে না পাইলেও, তোমাদের জীবন চলবে। কষ্ট করে অর্জন করো। নাকি কষ্ট করতে চাও না। অন্যের জিনিস নিয়ে মারামারি করা বাদ দাও। আমাকে ভোগ করার কোন অধিকার তোমাদের নাই।
বাবার সম্পত্তি ভাগ করার সময় সন্তানদের মারামারি কতটা যুক্তিক। বাবার সম্পত্তি উত্তরাধিকারীরা পাবে, এটা সব সমাজে প্রচলিত। সমাজে প্রচলিত উত্তরাধিকারী প্রথা এখন পর্যন্ত সঠিক নিয়ম। এর বাইরে নতুন কোন আইডিয়া এখনো পৃথিবীতে আসেনি। বাবার জমিজমা সন্তানরাই ভোগ করুক, এটা ঠিক আছে। কিন্তু কারও ভাগে একটু কম, কারও ভাগে একটু বেশী অথবা কারও ভাগে সরস, কারও ভাগে একটু নিরস হতেই পারে। যাদের বাপ দাদারা কিছুই রেখে যায়নি, তারাও তো আজকে অনেকেই অনেক জমিজমার মালিক। বাপ দাদার সম্পত্তি উপরি পাওনা হিসেবে মনে করে, ভাগের একটু কম - বেশী মেনে নিতে এত সমস্যা কেন? যতটুকু পাই সেটাই তো উপরি পাওয়া। এর জন্য আমার কোন অবদান  আছে কি? তাহলে কেন এত রক্তপাত। তাহলে কেন কোট কাচারীতে জমির মামলা সবচেয়ে বেশী? যে জমির জন্য আজ এত মারামারি খুনাখুনি করছি তা আমি কতদিন ভোগ করতে পারবো, তার হিসাব করছি কি? গতদিন বাবারা খুনাখুনি করছে, আজকে আমি করছি, আগামীদিন আমার সোনার সন্তানেরা করবে। এ কি হাজার বছর ধরে চলতেই থাকবে?
একটু সরস - নিরস অথবা একটু কম-বেশী মেনে নিয়ে ঐক্য বজায় রাখলে ঐ জমির চেয়ে আরও ভালো জমি কিনে নেওয়া যাবে। আরও বেশী উন্নতি করা যাবে। দরকার ঐক্য, দরকার ভালোবাসা, দরকার মিলেমিশে থাকা।

বই পড়ুন

একশো বছর আগে প্রকাশিত যে বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় তা ঐ সময়ের সবচেয়ে ভালো বই। বইয়ের লেখক ঐ সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। লেখক তার সর্বোচ্চ মেধা এবং সবচেয়ে ভালো কথা গুলো লেখেন। সুতরাং বই পড়ছেন তো সবচেয়ে জ্ঞানী লোকের সবচেয়ে ভালো কথা গুলো পড়ছেন।