কোন কিছু খুঁজতে চাইলে, বক্সে লিখুন

Wednesday 10 October 2018

অবুঝ মানবিক পঞ্চগড়

“মানবতার জন্য নাটক” এই স্লোগানে পঞ্চগড়ে শুরু হইছে এক সপ্তাহ ব্যাপি আর্ন্তজাতিক নাট্য উৎসব - ২০১৮। আমি প্রথম যেদিন খবরটা দেখলাম বা শুনলাম, আমার খুবই ভালো লাগলো। মানবতার এই শহরেএ রকম একটা উৎসব হবে খুবই চমৎকার। পঞ্চগড়ের মানবিক মানুষ গুলো নাটক দেখে আরো মানবিক হয়ে উঠবে, ভাবতেই ভালো লাগছে। পঞ্চগড় কে মানবিক শহর বলছি কারণ আমি বাংলাদেশের যত গুলো শহরে বাস করছি তার মধ্যে পঞ্চগড়ের মানুষ কে অনেক মানবিক বলে মনে হইছে। তবে আমাকে যখন পঞ্চগড়ে বদলি করে, আমি খুবই অখুুশি ছিলাম। বদলি দ্ওেয়ার আগে হেড -অফিস থেকে আমাকে বলা হয়েছিল আপনি কোথায় বদলি চান। আমার উত্তর ছিল পঞ্চগড় বাদে যে কোনো অফিসে বদলি করলে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কি আর করার হেড-অফিস বলে কথা। পঞ্চগড়ে বাস করার প্রায় ৪বছর হল। আমি এখন পঞ্চগড়ীয়া। পঞ্চগড়ের লোকজন আসলেই মানবিক এটা আমি বিশ্বাস করি।আমার ছোটকাল গ্রামে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমি গ্রাম থেকে বড় হয়েছি। আমরা প্রায় সবাই এই কথাটা বিশ্বাস করি, শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষকে বেশি বিশ্বাস করা যায়। গ্রামের মানুষের সম্পর্ক গুলো অনেক মজবুত এবং অতি সহজ সরল। এমনকি গ্রামের মানুষ গুলো অনেক বেশি মানবিক। শহরের মানুষের তুলনায় গ্রামের মানুষ কেন বেশি মানবিক? আমার অভ্যন্তরীন দৃষ্টি দিয়ে বুঝার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে মনে হয়, মানুষ শিক্ষিত হলে যেকোনো পরিস্থিতে সামাল দিতে সক্ষমতা অর্জন করে, শিক্ষিত মানুষেরা অভিনয়টা (মঞ্চের নয়) খুব ভালো ভাবে করতে পারে। শিক্ষিত লোকেরা অভিনয়টাকে বাস্তবের মতো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পারে। কোন শিক্ষিত লোকের অভিনয় অশিক্ষিত তো নয়,এমনকি শিক্ষিতরাই আচ করতে পারবেনা। শিক্ষিতরাই হয় চালাক, চতুর, বুদ্ধিমান। এ জন্য সে মানবিক কিনা বুঝা কঠিন হয় বটে। অপর পক্ষে গ্রামে বসবাস কারী লোকেরা বেশীর ভাগ অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত। এদের স্পষ্ট তো বুঝা যায়, কে মানবিক আর কে মানবিক নয়। তাছাড়া অমানবিক লোকেরা গ্রাম সমাজে মূল্যায়ন পাইনা। এ জন্য বেশীরভাগ অল্পশিক্ষিত লোক হয়ে যায় মানবিক। আর এ জন্যই গ্রাম সমাজ শহর সমাজের তুলনায় মানবিক।

বাংলাদেশের অন্য শহরের তুলনায় পঞ্চগড় এখনো মানবিক শহর। সম্মিলিত সংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক অকপটে তা স্বীকার করেছেন। গতকাল ( ৯ ই অক্টোবর ২০১৮) ভুমিজ আয়োজিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমিছিলাম। এই অনুষ্ঠানের অনেক বিষয় আমাকে হতাশ করেছে।
এক ঃ অনুষ্ঠান শুরু হইছে, আমাদের দেশী বিদেশী অতিথিরা আছে, অন্যতম সম্মানী ব্যাক্তি মাননীয় সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর (বাকের ভাই) আছেন, বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনীর নাট্যকর্মী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক আছেন। কিন্তু মঞ্চে কোন লাইট নাই। মঞ্চের উপর সব সময় একটা ঝোটলা লাগেই আছে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দ্বায়িত্ব একজন নাকি তিনজন আমি বুঝতে পারছিনা। বিদেশী মেহমানদের সামনে আরও নিয়মতান্ত্রিক হওয়া দরকার ছিল।
দুই ঃ সভাটি কিন্তু রাজনৈতিক না, অথচ সব আওয়ামীলীগ নেতারা ভোট ভিক্ষার প্রার্থনা করলেন। অবশ্য এটা এখন সারা বাংলাদেশে। (এক্ষেত্রে মন্ত্রী বাকের ভাই কিন্তু এরকম বক্তব্য দেননি।)। প্রায় সব বক্তাই দাবি পেশ করলো। একজন মন্ত্রী কে কাছে পাবো আর দাবি পেশ করবো না, এটা তো হতে পারেনা। এটা হওয়াও উচিতও না। জোড়ালো যৌক্তিক দাবি পেশ করাটাই বুদ্ধি মানের কাজ। কিন্তু বক্তারা দাবি গুলোর প্রতি কোন যেীক্তিকতা দেখাতে পারেননি। পঞ্চগড়ে একটা বিশ্বাবিদ্যালয় লাগবে কিন্তু কেন? তার কোন ব্যাখ্যা নাই। কোন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় লাগবে তারও কোন ব্যাখ্যা নাই। দাবি গুলো কেন পূরন করতে হবে তার কোন ব্যাখ্যা করতে পারেননি। কেউ একজন বলে ফেললো মেডিকেল হোক, বিজ্ঞান হোক যে কোন ধরনের একটা বিশ্ববিদ্যালয় হলেই হবে। আমার প্রয়োজন আছে কিনা বা কতটুকু প্রয়োজন তা কিন্তু মন্ত্রীকে বুঝাতে পারিনি। বক্তব্যে একজন তো মন্ত্রী কে দোষী করে বলেই ফেললো“আপনার মেডিকেল কলেজ আছে, আপনার ইপিজেড আছে, আপনার বড় অডিটোরিয়াম আছে কিন্তু আমাদের নাই। আপনি আমাদের দেননি এতএব আপনি প্রতিবেশীর হক আদায়করেননি।”বক্তার সুপ্ত কথাটি হয়তো এরকম আপনি স্বার্থপর।
প্রায় সব বক্তাই একটা ব্যাখ্যা কিন্তু দিয়েছেন। যেটা কে আমি মনে করি অপব্যাখ্যা। পঞ্চগড়ের অস্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে কষ্ট দায়ক। আর এ কারনে আমার খুব খারাপ লাগছে। আর এ কারনেও আমাদের পঞ্চগড়ের লোকদের কে মানবিক মনে হচ্ছে, ঐ গ্রামের লোকদের মতোই মানবিক। হয়তো ঐরকম দৃষ্টিতে পঞ্চগড় এখনো মানবিক। গ্রামের মানবিক লোক গুলো অনেক অমানবিক কাজ করে কিন্তু সে তা বুঝতে পারেনা, যে এটা অমানবিক।
বক্তা গুলোর ব্যাখ্যা হলো – যেহেতু আপনার নীলফামারীতে মেডিকেল কলেজ করলেন (মন্ত্রীর বাড়ী নীলফামারীতে), যেহেতু আপনার ইপিজেড আছে, যেহেতু আপনার নীলফামারীতে এটা আছে, যেহেতু আপনার ওটা আছে, সেহেতু আমাদের পঞ্চগড়েও লাগবে। আপনার নীলফামারীতে যা যা আছে তা যদি আমাদের দেন তা যদি পূরন করেন তাহলে (আমরা আপনার প্রতিবেশী ) প্রতিবেশীর হক পূরন হবে অনথ্যায় নই। এসব কথা দিয়ে মন্ত্রীকে আমরা বুঝিয়ে দিলাম, আমাদের যাহা নাই তাহা আপনার থাকা উচিৎ নয়। আপনার থাকলে আমাদেরও থাকতে হবে। নইলে আপনিও তা নিতে পারবেননা। বক্তব্যের এক ফাকে মন্ত্রী রস করে বলেছিলেন, নীলসাগর ট্রেন ওটাও কিন্তু আমাদের নীলফামারীর ট্রেন। কথাটি রস বোধক কিন্তু বাইরে রস ভিতরে বেদনা। ভিতরে অপমান। হয়তো পঞ্চগড়ে কিছু দিতে পারেনি তার অনুশোচনা নয়তো নীলফামারী উন্নয়ন নিয়ে পঞ্চগড়ের হিংসা তার ক্রোধ।
এক প্রকার দোষী মন নিয়ে অথবা বেদনা নিয়ে নতুবা ক্রোধ নিয়ে বিদায় নিলেন আমাদের প্রান প্রিয় বাকের ভাই। 
আমরা হয়ে গেলাম অবুঝ মানবিক। অবুঝ মানবিক পঞ্চগড়।

কেমন লাগল পরামর্শ আশা করছি।

No comments:

বই পড়ুন

একশো বছর আগে প্রকাশিত যে বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় তা ঐ সময়ের সবচেয়ে ভালো বই। বইয়ের লেখক ঐ সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। লেখক তার সর্বোচ্চ মেধা এবং সবচেয়ে ভালো কথা গুলো লেখেন। সুতরাং বই পড়ছেন তো সবচেয়ে জ্ঞানী লোকের সবচেয়ে ভালো কথা গুলো পড়ছেন।