কোন কিছু খুঁজতে চাইলে, বক্সে লিখুন

Sunday 23 February 2014

জে এস সি শুধু তোমার জন্য

আমি ক্ষুদ্র একজন সামান্য লোক। আমি তোমাদের মাঝ থেকে বড় হয়েছি। তোমরা সবাই আমাকে চিন, জান। নতুন করে পরিচয় করার মত কিছু নেই। তারপরও আমার নাম ঠিকানা সব শেষে দেওয়া আছে।

জন্মগত ভাবে জ্ঞান পিপাসু মানুষ। এর ফলে মানুষ আজ জ্ঞানী সভ্য। এই জ্ঞান মানুষ অর্জন করে বিভিন্ন উপায়ে,বিভিন্ন বিষয়ে,বিভিন্ন ভাবে। জ্ঞান অর্জনের প্রথম ও প্রধান ক্ষেত্র পরিবার। আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি অনেক বেশী অবদান রাখছে সভ্যতার বিকাশে। মানুষ জ্ঞান অর্জন ও সভ্য হয় দু প্রকারে এক অনুষ্ঠানিক শিক্ষা দুই হচ্ছে, অনুষ্ঠানিক শিক্ষা। অনুষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে পড়ে আমাদের সমাজের অšর্তগত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন: স্কুল , কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।


তোমরা যারা আমার লেখাটা পড়বে আমি ধরে নিচ্ছি তোমরা সবাই প্রাইমারী শেষ করেছ। কেউ জে. এস. সি কেউ এস. এস. সি. লেভেলে হয়ত কেউ এইচ. এস. সি. লেভেলে। আমি আরও ধরে নিচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেভেলের কেউ হয়ত পড়বে কিন্তু আমি তাদের জন্য লিখছি না। আমি লিখছি জে এস সি ও এস এস সি দের জন্য। বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে যারা লেখাপড়া করে তাদের জন্য। আরও একটা কথা বলি যারা উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছ না পরিবার,সমাজ,পরিবেশ থেকে তাদের জন্য। যারা প্রতিবন্ধকতার মাঝে আছ তাদের জন্য। আমি এইচ এস সি পর্যন্ত গ্রামে শেষ করেছি তাই একটু বেশী জানি।

তোমার ক্লাশ সকাল ১০.৩০টায় সকালে ৮.৩০টায় গনিত প্রাইভেট তাই ৮.০০ টার মধ্যে বের হতে হবে এবং প্রাইভেট হতে সরাসরি স্কুলে যাইতে হবে। ৭.৪০ টা সময় এখনও তোমার মা অথবা অন্য কেউ উনুনে রান্না-বান্না করছে। তুমিও অনেক তাড়া করছ, পাক ওয়ালী অনেক তাড়া করছে। সময় পুরো ৮.০০ টা ফু . . . .ফু . . . .. ফু  কোন রকমে আধপেট খাবার খেয়ে রাওয়ানা। স্যারের বোকা এত দেরি কেন? তুমি ভাল ছাত্র স্যার বেশী কিছু বললনা। ভাগ্যিস খারাপ ছাত্র নয়। প্রাইভেট শেষ করে স্কুলে গেছ ঠিক বিরতির সময় তোমার অনেক খিদা লাগছে। চিন্তা করছ, স্কুল ফাকি দিয়ে চলে আসবে। কিন্তু না সামনে পরীক্ষা ক্লাশ মিস করা যাবে না। পরীক্ষায় ভাল করতে হবে তুমি ভাল ছাত্র। ঢং . . . . . ঢং . . . . . . ঢং ৬ষ্ঠ পিরিয়ড স্কুল ছুটি, যাক বাচা গেল। কোন রকমে বইপত্র নিয়ে ছুট। ও! শরীরটা তোমার অনেক ক্লান্ত। বাড়ীতে মামা আসার কথা খাবার টা অনেক ভাল হবে মুরগি,মাংস কিংবা মাছ তো হবেই। বাড়ী আরও ১০০গজ দূরে। একটা একটা করে শার্টের বোতাম মুক্ত করছ ঘের হতে। বাড়ী ঢুকতে না ঢুকতেই প্যান্ট খুলে ধপাস করে বিছানায়। হাত মুখ ধুয়ে খাইতে বসেছ তোমার পাতে কোন তরকারি নেই,আর ভাত যা আছে তা খাবার উপযুক্ত নয়।

২য় সময়িক  পরীক্ষা শুরু আগামী ১৫ তারিখ। বেতন পরীক্ষার ফি সব মিলিয়ে ৮০০ টাকা লাগবে আব্বা বলল ৮ তারিকে দিব। ৮ তারিখে তুমি বললা আব্বা টাকা লাগবে। আব্বা বলল রনি,সাকিল,রতন ওরা সবাই দিয়েছে। তুমি বললা জানিনা। ওরা কত টাকা দিয়েছে খবর নিয়ে আস কালকে দিব। পরের দিন“ওরা দিয়ে দিছে” তুমি মিথ্যা বললা কারন হচ্ছে ওদের অবস্থা তোমার মত। আব্বা বলল ১৪ তারিকে দিব। তুমি লজ্জায় স্কুল ছুটি দিয়ে দিলে। কিন্তু তুমি ভাল ছাত্র এটা করা যাবে না। ২য় সাময়িক পরীক্ষা শেষ, বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। নতুন বছরের জন্য নতুন বই লাগবে। আব্বা টাকা দিচ্ছে না।

এখন তোমার খুব মনে হচ্ছে বাবা,মা কেউ তোমার ভাল চাইনা। তুমি খুব গভীর ভাবে চিন্তা করছ এরা কেউ চাইনা আমি লেখাপড়া করি।  আমার বন্ধু রিপনকে তো ওর বাবা মা খুব ভালবাসে আদর যতœ করে। বই-পত্র,পোশাক-আশাক অনেক ভাল ভাল। তোমার বাবা মাকে খুব গালি দিচ্ছ। কথায় কথায় ঝগড়া করছ,মুখে মুখে তর্ক করছ। তুমি কিন্তু জান বাবা মার সাথে ঝগড়া,তর্ক করা য়ায না। তারপরও করছ। কারন ওরা তোমার ভাল চাই না। তাই যে করে হোক আমার অধিকার আদায় করতে হবে। বাবা মার সাথে খারাপ ব্যবহার করছ। তোমার কোন কিছু ভাল লাগেনা। প্রতিবেশীরা বকাবকি করছে তুমি বিয়াদব। লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছ। তোমার কোন বড় ভাই,কোন চাচা কিংবা অন্য কেউ খুব করে বলছে লেখাপড়া চালিয়ে যাও।

মোট তিনটা সমস্যার কথা উল্লেখ করলাম। এখনও তোমার মনে হচ্ছে আমার বাবা মা আমার ভাল চাই না। কথাটা একেবারে সত্য না। ১০০% মিথ্যা কথা। পৃথিবীতে এমন কোন প্রানী নাই যে তার সন্তানকে ভালবাসেনা। সকল প্রানিকুল তার সন্তানকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। তুমি ভাবছ তাহলে আমার সাথে এরকম আচরন করছে কেন ? তোমার যে চাহিদা তারা তা বুঝতে পারে না। তোমার বয়স ১২ ওদের বয়স ৪০ বছর অনেক ফ্যারাক। আমাদের বাবা মা রা বেশী শিক্ষিত না। আর শিক্ষিত হলেও বর্তমান কম্পিউটার যুগের চাহিদা বুঝতে পারে না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের পরিবার গরীব। তাই কাম্য চাহিদা পূরন করতে পারে না।  পিতা মাতা যত কষ্ট করে তার সব সন্তানের জন্য। তুমি কি জান তোমার পিতা মাতা কত কষ্ট করে তোমার জন্য। যখন বড় হবে তোমার দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পাবে তখন বুঝতে পারবে তোমার বাবা মা তোমাকে কত ভালবাসে।

আসলে জীবনটা হচ্ছে একটা খেলার মাঠ যে জিতবে সে টিকে থাকবে। তোমাকে সংগ্রাম করতে হবে ছোট থেকে। কখনও এরকম বলবে না আমরা গরীব তাই ভাল রেজাল্ট করতে পারি নাই। এরকম বলবে না গ্রামে লেখাপড়ার পরিবেশ নাই। আমার বাবা মা বেশী ভাল না,আমাদের স্কুলটা ভাল না। অজুহাত এর মত খারাপ কাজ আর কি হতে পারে। তুমি যেখানেই আছ যেভাবেই আছ ওখান থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাও। তোমার মাঝে হতাশা আসতে পারে,তোমার মাঝে পরাজয় আসতে পারে তার মানে তুমি কিন্তু পরাজিত না।

আমার অনেক কাছের এক বন্ধু ব্যর্থ হয়ে খুব মন খারাপ করে বসে আছে তখন তাকে এভাবে বলেছিলাম। একটা গল্প  মনে পড়েছে বলি - কয়েক দিন আগে খাবার টেবিলে বসে আছি দেখলাম ছোট কালো পিপড়া ভাতের ওপর হাটাহাটি করছে বেশ কয়েকবার এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করল। এক সময় টানার চেষ্টা করছে কয়েক বার চেষ্টা করল পিপড়াটি বার বার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। এবার সে ব্যর্থ হয়ে চলে যাচ্ছে। ভাবলাম পিপড়া নিরাশ, কিন্তু না পথে তার একজন সঙ্গী, এবার দুজনে মিলে চেষ্টা করছে এবারও তারা ব্যর্থ হইল এবং স্থান ত্যাগ করল। ভাবলাম যা পিপড়া আর পারল না, আসল সত্য তা নয় তারা দুজনে আরও সঙ্গী নিয়ে আসল ২, ৪, ৮, ১৬ ইত্যাদি। শেষে পিপড়া সুস্বাদু খাবার আস্তানায় নিয়ে যেতে সক্ষম হইল। কঠোর পরিশ্রম , সর্বাধিক মনোবল সফলতা বয়ে নিয়ে আসে। একবার ব্যর্থ তার মানে তুমি পুরোপুরি ব্যর্থ নও চেষ্টা কর সফলতা তোমাকে ডেকে নিয়ে আসবে। একবার খারাপ করেছ তাতে কি সময় তো শেষ হয়ে যায়নি আর একবার চেষ্টা কর নিশ্চিত সফলতা।


*কখনও চোখের জল ফেলনা, কারন চোখের জল হচ্ছে দূর্বলতার পরিচয়।
*যদি কখনও ব্যর্থ হও অজুহাত দিবে না, নিজের ভুলটা বের কর।
*কখনও বলনা এই পজিশন থেকে ভাল করতে পারবনা, তোমার পিছনে দেখ আরও অনেক দুঃখী তোমার চেয়ে ভাল করছে।


কেমন লাগল পরামর্শ আশা করছি।

No comments:

বই পড়ুন

একশো বছর আগে প্রকাশিত যে বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় তা ঐ সময়ের সবচেয়ে ভালো বই। বইয়ের লেখক ঐ সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। লেখক তার সর্বোচ্চ মেধা এবং সবচেয়ে ভালো কথা গুলো লেখেন। সুতরাং বই পড়ছেন তো সবচেয়ে জ্ঞানী লোকের সবচেয়ে ভালো কথা গুলো পড়ছেন।